নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম - একাদশী ব্রত কথা জেনে নিন

হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতরে কিন্তু অনেক ধরনের নিয়মকানুন থাকে আর আপনি যদি হিন্দু হয়ে থাকেন তাহলে সেই নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম গুলো আপনাকে সঠিকভাবে পালনও করা লাগবে। নির্জলা একাদশীতে উপোস থেকে আপনাকে নিয়ম গুলো পালন করতে হবে।
নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম
অনেকেই হয়তো সঠিকভাবে এই নিয়মগুলো পালন করতে জানেন না। তো আজকের পোস্টটা আপনার জন্য। আমাদের আজকের পোস্টে আপনাদের জন্য বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম, একাদশীর ব্রত কথা, পান্ডবা  ইত্যাদি।তো চলুন আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

পোষ্টের সূচিপত্রঃ নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম - একাদশী ব্রত কথা

নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম

নির্জলা একাদশী পালন করাটা সত্যি অনেক কঠিন বলে মনে হয়। নির্জলা একাদশী পালনের দিনটি খুব গরমের ভেতরে গ্রীষ্মের সময়ে পড়ে। নির্জলা একাদশী পালন করতে তাদের কে ১ দিন মানে ২৪ ঘন্টার মত উপোস থাকতে হয়। কোন কিছু না খেয়েই। নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম তবে অন্য যে একাদশীগুলো রয়েছে সেগুলোতে কিন্তু ভারী খাদ্য বাদে অন্য জিনিস খাওয়া যায়। নির্জলা একাদশী পালনের জন্য আজকে সকালে সূর্য ওঠার আগে যতটুকু ভাত পানি খাওয়া যায় ততটুকু খেয়ে পর দিন সকালে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত তাকে না খেয়েই থাকতে হয়। 

নির্জলা একাদশী দুই ভাবে পালন করে একটা হচ্ছে 24 ঘন্টার উপসে আর একটা হচ্ছে ১২ ঘন্টার উপসে। ২৪ ঘন্টার উপসে যেটা হয় সেটা হল আজকে সূর্য উঠার আগে খেয়ে আর কালকে সূর্য ওঠার পর পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে। আর ১২ ঘণ্টার উপসে সকালে সূর্য ওঠার আগে খেয়ে সূর্য অস্ত্র যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর খেতে হয়। এই উপসে কোন পানি ফল বা কোন খাদ্য খাওয়ার কোন নিয়ম নেই। তবে যদি কারো খুব জরুরী দরকার হয় সে ক্ষেত্রে তাকে এক ফোটা পানি পানের অনুমতি প্রদান করা হয়। কিন্তু এর থেকে বেশি পানি পান করলে তাদের উপোস ভঙ্গ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়।

একাদশী ব্রত কথা

একাদশীর ব্রত কথা বলতে গেলে বলতে হবে এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতরে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা এটি আনন্দের সহিত উপভোগ করেন। হিন্দুদের যে পঞ্জিকা থাকে সেটিতে তিথি অনুযায়ী কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষের একাদশ তম তিথি ঠিক করা হয়। একাদশীর এই তিথি ঠিক করা হয় চাঁদ কি অবস্থায় আছে সেটি নির্ণয় করে তারপর তার অবস্থান বুঝে। একাদশীর এই ব্রতে তারা বিষ্ণু ভগবানের উদ্দেশ্যে উপাসনা করে থাকে। 
বছরে ২৪ টা করে একাদশী হয়ে থাকে অধিবর্ষগুলোতে দুইটা একাদশী বেশি হয়ে থাকে। পুরান তিথি বিবেচনা করে বিষ্ণু ভক্তের অম্বরিষের একাদশী পালনের কথা বলা হয়েছে। এই একাদশীর ব্রতে তারা শুধুমাত্র দুগ্ধ জাতীয় জিনিস ফলমূল ইত্যাদি খেতে পারবেন। এর বাইরের কোন খাবার দারা খেতে পারবেন না। তারা মনে করেন যে একাদশীর এই ব্রতে উপোস রাখা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। মন ও শারীরিক ইন্দ্র গুলোর উপরে কাবু পাওয়ার জন্য তারা এই ব্রত রেখে থাকেন।

পান্ডবা নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম

পান্ডবা নির্জলা একাদশী অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি একাদশীর নাম। আপনারা কি কেউ জানেন এই পান্ডবা নির্জলা একাদশীর নামকরণ কেন করা হয়েছিল? তবে আমার ধারণা অনেকেই হয়তোবা জানেন না। পান্ডুর ছেলে ভীমসেন যখন প্রথমবারের মতো একাদশী পালন করেছিলেন তখন তিনি এই তিথিটি থেকেই একাদশী পালন করেছিল। আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই একাদশী তিথিটির নাম হয়ে গিয়েছে পান্ডবা নির্জলা একাদশী। এই পান্ডবা নির্জলা একাদশীটির তিথিগুলো বৈষম্য সমাজে নির্জলা -নির্জল, পান্ডবা -পান্ডব ভীম সেন ইত্যাদি তিথি নামে পরিচিত। 

তবে এই পান্ডবা নির্জলা একাদশীর কিছু নিয়মকানুন আছে এগুলো হলো - পান্ডবা নির্জলা একাদশীর এই দিনে সকলকে না খেয়ে উপোস থেকে ব্রত পালন করতে হয়। এই ব্রত পালনে তারা কোন প্রকার খাদ্য খাবার খেতে পারবে না। তারপর গোসল সেড়ে শুদ্ধিচিত্ত হয়ে নাচের তালে শ্রীকৃষ্ণ কে অর্চন করাবে। এরপরেই উপোস থেকে ব্রাহ্মণদেরকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতরে এই পান্ডবা নির্জলা একাদশী ব্রত কেউ সহজে ভঙ্গ করে না। তবে যদি কেউ ভঙ্গ করে তাহলে সে নরকে যাবে। আর নরকের থেকে বাঁচতে হলে তাদেরকে এই ব্রত সঠিকভাবে সঠিক নিয়ম মেনে পালন করতেই হবে। যারা স্বর্গবাসী হতে চায় তারা এই পান্ডবা নির্জলা একাদশী নিয়ম ভঙ্গ করবে না।

পান্ডবা নির্জলা একাদশী মাহাত্ম্য

পান্ডবা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে আপনারা হয়তো অনেকেই হয়তো জানেন না। অনেকের কাছে অনেক বিষয় অজানা থাকতেই পারে। তবে আমি মনে করি আজকের পরে এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের ভিতরে আর কোনরকম কোন কনফিউশন বা প্রশ্ন থাকবে না।পান্ডবা নির্জলা একাদশী জৈষ্ঠ মাসে শুরু হয়। এই একাদশীর শুক্লপক্ষের তিথিকে পান্ডবা বা নির্জলা একাদশী বলা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতরেই পান্ডলা নির্জলা একাদশী অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আপনারা অনেকে হয়তো জানেন না যে পান্ডবা নির্জলা একাদশী কিসের ভিত্তিতে এই নামকরণ করা হয়েছিল। পান্ডবা নির্জলা একাদশী নামটি এসেছিল পাণ্ডবের পুত্র ভীমসেনের একাদশী পালন করার তিথি থেকে। ভীমসেন এই একাদশীটি থেকেই ব্রত পালন করেছিলেন আর সেই থেকেই এই প্রথাটি চলে আসছে। এখনো পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতরে এই পান্ডবা নির্জলা একাদশী অনেক বেশি জনপ্রিয়তার সাথে পালন করছে মানুষ।

উত্থান একাদশী পালনের নিয়ম

বছরে যে একাদশী গুলা আসে তার ভিতরে উত্থান একাদশী অন্যতম। এই উত্থান একাদশী পালনে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয় যদি এই নিয়মগুলো আপনি সঠিকভাবে মানতে পারেন তাহলে বলা যায় যে অনেক ধন সম্পদের মালিক হবেন, ঐশ্বর্য রাজ্য সবকিছুই পাবেন সাথে পাপমুক্ত হতে পারবেন। শুক্লপক্ষের কার্তিক মাসে যে একাদশীটি আসে সেটি হচ্ছে উত্থান একাদশী নামে পরিচিত। এই মহিমার কথা দেবর্ষি নারদ কে তার পিতা প্রজাপতি ব্রহ্মা বলেছিলেন। 

এই একাদশী পালনে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে ভগবান শ্রী বিষ্ণুর উদ্দেশ্য নিয়ে জপ করলে পূর্ণি লাভ হয়। শ্রী গোবিন্দ ভগবান এই একাদশীতে যোগ-নিদ্রা থেকে জেগে উঠেছিলেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই উত্থান একাদশীকে মুক্তি প্রদায়ী একাদশীও বলা হয়। এই উত্থান একাদশী পালনে যে ব্রত রাখতে হয় সেই ব্রতভঙ্গ না করে সঠিক নিয়ম মেনে ব্রত টি পালন করলে এই একাদশীতে যে পরিমাণে পূর্ণতা লাভ করা যায় তা হাজার বছর ধরে কোনো যজ্ঞ করেও পাওয়া যায় না। 
এটি নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হয়। এই উত্থান একাদশী সম্পর্কে আরো বলা হয় যে যদি কেউ এই উত্থান একাদশীর রাতে সারা রাত জেগে একাদশী পালন করেন তাহলে তার সকল পাপ মুক্ত হয়ে যায়। মনিঋষিরা বলেন তারা তপস্যা করে যে ফল লাভ করতে পারে না এই উত্থান একাদশীর মাধ্যমে তার থেকেও বেশি ফল লাভ করা সম্ভব। 

ধারণা করা হয় যারা এই উত্থান একাদশীর দিনে একাদশী ব্রত পালন করেন তাদের পূর্বপুরুষেরা স্বর্গবাসী হয়। তবে এই উত্থান একাদশী পালনে কোনো রকম কোন ভুল করা যাবে না সঠিক নিয়ম মেনেই এই উত্থান একাদশী নিয়মগুলো পালন করতে হবে তাহলেই আপনি অধিক ফলপ্রসু হবেন।

লেখকের শেষ মন্তব্য

হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক নিয়ম কানুন থাকাতে অনেকেই সঠিক ভাবে তথ্যগুলো জানতেন না। আজকের পোস্টে আমরা নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম, একাদশীর ব্রতকথা,পান্ডবানি চলা একাদশীর নিয়ম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত তথ্যগুলো বিস্তারিতভাবে জানলাম। আশা করি এই তথ্যগুলো পেয়ে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
AB AKASH
AB AKASH
AB AKASH is a skilled Digital Marketing and Content Writing Expert specializing in driving organic growth through Blog SEO and strategic content creation. With a proven ability to translate complex ideas into compelling, high-ranking web content, AB AKASH helps businesses significantly boost their online visibility and engagement. Currently completing his Honours 4th Year in the Department of English at Rajshahi New Government Degree College.thank you.