হিন্দু বিয়ের নিয়ম কানুন - হিন্দু বিবাহের প্রকারভেদ

হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়েতে বিভিন্ন ধরনের নিয়মকানুন মানতে হয়। অনেকেই হয়তো জানে না যে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়েতে কি কি নিয়ম কানুন আছে বা কিভাবে সেগুলো পালন করতে হয়। যাদের হিন্দু বিয়ের নিয়ম কানুন এই সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই আজকের পোস্টটি তাদের জন্যই।
হিন্দু বিয়ের নিয়ম কানুন
তো আজকের পোস্টে আপনাদের সাথে হিন্দু বিয়ের নিয়ম কানুন সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করব। আজকের পোস্টের মূল বিষয়বস্তু হিসেবে থাকছে হিন্দু বিয়ের নিয়ম কানুন হিন্দু বিয়ের আচার অনুষ্ঠান প্রকারভেদ মন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। তো চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।

পোষ্টের সূচিপত্রঃ হিন্দু বিয়ের নিয়ম কানুন - হিন্দু বিবাহের প্রকারভেদ

হিন্দু বিয়ের নিয়ম কানুন

হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়েতে কিন্তু অনেক ধরনের নিয়মকানুন পালন করতে হয়। তাদের সম্প্রদায় আসলে একটু অন্যরকম। অনেক নিয়ম কানুনের মাধ্যমে তাদের বিবাহ কার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। যেমন ধরেন বর বরণ শুভদৃষ্টি, মালা বদল, সাতপাক, সিদুর দান ইত্যাদি। হিন্দু বিয়ের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জেনে  নিনঃ
  • বর বরণের সময় মেয়ের মা তার জামাইকে বরণ করতে আসেন এবং সাথে মঙ্গল প্রদীপ, দূর্বা, ধান নিয়ে আশীর্বাদ করেন সবশেষে তাকে মিষ্টি ও দুধ খাওয়ান।
  • শুভদৃষ্টিতে বর কনে একজন আরেক জনের চোখে চোখ রেখে ভাব বিনিময় করে থাকে। এটাকেই তারা শুভদৃষ্টি হিসেবে মানে।
  • মালা বদলে বর কনে একে অপরকে জীবনসঙ্গী মেনে নিয়ে তাদের গলার মালাটিকে একে অন্যের সাথে বদল করে থাকে।
  • সাত পাকে বাঁধা এই রীতিতে মাঝখানে একটি অগ্নি রেখে তার চারদিকে সাতবার ঘুরে মন্ত্র পাঠ করে প্রতিবদ্ধ হয়ে থাকেন।
  • সিঁদুর দান প্রক্রিয়াটিতে কন্যার কপালে সিঁদুর দেওয়া হয়। তারা মনে করেন সিঁদুর দেওয়ার কারণে তার স্বামী মঙ্গল হবে। তাই তারা সিঁথিতে সিঁদুর পড়েন।
  • হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই নিয়ম কানুন গুলোই তারা মেনে একটি বিবাহ সম্পন্ন করে থাকেন।

হিন্দু বিয়ের আচার

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়েতে অনেক ধরনের আচার নিয়ম নীতি মেনেই বিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। যেমন ধরেন কঙ্কনাঞ্জলি, বধূবরণ, কালরাত্রি, বৌভাত, ফুলশয্যা ইত্যাদি।
  • মেয়ে বিদায়ের মুহূর্তে তার বাবার বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় এই অঞ্জলি দিয়ে তাকে যেতে হয়। তারা মনে করেন যে মেয়ে তাদের ঘরের লক্ষ্মী আর চাল ও তাদের ঘরের লক্ষী। তাই মেয়ে চলে যাওয়ার সময় লক্ষ্মী হিসেবে চাল কে তারা তাদের মায়ের কাছে বাবা বাড়িতে রেখে যাই। মেয়ে চলে যাওয়ার আগে এই চাল দেওয়ার প্রসেসটা করা হয়। মেয়ে চলে যাওয়ার মুহূর্তে পিছন দিকে না তাকিয়ে তিনবার মায়ের আঁচলে চাল ফেলতে হয়।
  • বরের বাড়িতে গিয়ে নতুন বউকে বরণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ নিয়ে তাকে বরণ করা হয়। ঘরের নতুন বউকে আলতা দুধ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বরণ করার পর বরের সাথে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
  • বরের বাড়িতে গিয়ে কালরাত্রি নামক একটি প্রথা তারা পালন করেন। এই কালরাত্রিতে বর ও বউ একে অপরের চেহারা দেখা থেকে বঞ্চিত থাকে এবং পরবর্তী সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। পরবর্তী দিন আবারো বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়।
  • পরবর্তী দিন নতুন বউ তার বরের জন্য রান্না করে এবং পরিবারের বাকি সবাই কেও বেড়ে খাওয়ান। এরপর নতুন বর তার নতুন বউয়ের ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
  • এরপর আসি ফুলশয্যাতে। এই দিনটি বর এবং বউ দুজনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। ফুলশয্যাতে রুম সহ বেডের চারিদিকে ফুল দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়। ফুলশয্যা রোমাঞ্চকর একটি রাতের নাম।

হিন্দু বিবাহের প্রকারভেদ

বিবাহ বলতেই একটি পবিত্র সম্পর্ককে বোঝায়। হিন্দুদের বিবাহ বলতে সামাজিক রীতিনীতি মেনে যে পবিত্র সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাকেই বলে। হিন্দু বিবাহের প্রকারভেদ এর মধ্যে দুইটি প্রকারভেদ রয়েছে গান্ধববিবাহ এবং ব্রাহ্মবিবাহ।
  • নিজে পছন্দ করে প্রেম করে বিয়ে করাকেই গান্ধব বিবাহ বলে। এখানে নিজের মতো করে পছন্দ করে যখন দুইটা পরিবারকে একসাথে বুঝিয়ে তাদের সম্মতি নিয়ে বিয়ের পিরিতে বসানো হয় তখন সেটাই গান্ধব বিবাহ হিসেবেই ধরা হয়।
  • যখন সামাজিক রীতিনীতি নিয়ম কানুন মেনে বিবাহ সম্পন্ন করা হয় তাকে ব্রাহ্মবিবাহ বলে। এটিতে সকলের পছন্দ অনুযায়ী পাত্র সিলেক্ট করে সামাজিক ধর্ম মেনে বিবাহকার্য সম্পন্ন করা হয়।

হিন্দু বিয়ের মন্ত্র

হিন্দু বিয়েতে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। তোমার হৃদয় আমার হোক আমার হৃদয় তোমার হোক এমন একটি কথাতে তাদের মন্ত্র উচ্চারিত হয় মন্ত্রটি হল "যদিদং হৃদয়ং তব তরিদং হৃদয়ং মম "। এই মন্ত্রটি মাধ্যমে বোঝানো হয় স্বামী স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য ও ভালোবাসা দায়িত্বের কথা। হিন্দু বিয়েতে অনেক নিয়ম কানুন রীতিনীতি প্রথা চালু আছে তবে এই মন্ত্রটি যেন একটু অন্যরকম দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। ''তোমার হৃদয় আমার হোক আমার হৃদয় তোমার হোক,, কি চমৎকার একটি কথা তারা উল্লেখ করে। এটা হচ্ছে ওই মন্ত্র টার বাংলা অর্থ। এই বিয়েতে যে মন্ত্র পাঠ করে হয়তো অনেকেই এটার মানে বুঝে না জানেনা।

হিন্দু ধর্মে কাকে বিয়ে করা যায় না

হিন্দু ধর্মের মধ্যে আপন রক্তের কাউকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ নিষেধ। যেমন চাচাতো ভাই / বোন, ফুফাতো ভাই / বোন, খালাতো ভাই/ বোন, মামাতো ভাই / বোন ইত্যাদি। এইগুলোকে বিবাহ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। অনেকেই অনেক ক্ষেত্রে টাকার লোভে বা সম্পত্তির লোভে নিজেদের আত্মীয়র ভিতরে বিবাহ করেন। আগেকার দিনের প্রথা ছিল যে নিজেদের আত্মীয়র ভিতরে বিবাহ করলে তাদেরকে হত্যা করা হবে। কিন্তু এখনকার রীতি নীতি অনুসারে এগুলো আর কেউ মান্য করে না। 
তবে নিজেদের আত্মীয়তার ভিতরে বিবাহ সম্পন্নভাবে নিষিদ্ধ আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের গুরুজনেরা মনে করেন যে নিজেদের ভিতরে বিয়ে করলে জিনগত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেটা পরবর্তীতে তাদের সন্তান-সন্ততি বা পারিবারিক দিক থেকে বড় সমস্যার রূপ নিতে পারে। তাই হিন্দু ধর্মে নিজেদের আত্মীয়তার ভিতরে বিয়ে করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

বাঙালি বিবাহের নিয়ম

বাঙালি বিবাহের মধ্যে দুই সম্প্রদায়ের ভিন্ন নিয়ম নীতি মেনে বিবাহ সম্পন্ন করার প্রথা চালু রয়েছে।
  • ১. মুসলিম সম্প্রদায়ের বাঙালি বিবাহ ও
  • ২. হিন্দু সম্প্রদায়ের বাঙালি বিবাহ।

মুসলিম সম্প্রদায়ের বাঙালি বিবাহ

মুসলিম সম্প্রদায়ের বাঙালি বিয়েতে যে নিয়মগুলো মানা হয় তার মধ্যে প্রথম হল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। ছেলে এবং মেয়ে দুজনের বাড়িতেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করা হয়। এরপর তাদেরকে গোসলের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সাবান শ্যাম্পু মাখিয়ে প্রায় ৭ রকমের ফুল দিয়ে ভেজানো পানি দিয়ে তাদেরকে গোসল করিয়ে সুন্দর করে ক্ষীর খাওয়ানোর জন্য পোশাক পড়ানো হয়।
মেয়ে বা ছেলেকে বসিয়ে তাদের সামনে বিভিন্ন রকমের ক্ষীর উপস্থিত করা হয় এবং দলে দলে মানুষ এসেছে তাদের গালে ক্ষীর দিয়ে তাদের হাতে উপহার হিসাবে কিছু টাকা দিয়ে চলে যায়। এরপর বিয়েতে বরযাত্রীর জন্য খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। খাওয়া-দাওয়া শেষে মেয়েকে বধু সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বরের বাড়িতে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাঙালি বিবাহ

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাঙালি বিয়েতে মুসলিম সম্প্রদায় থেকে অনেক বেশি নিয়ম-কানুন পালন করা হয়। যেমন সাত -পাক, শুভদৃষ্টি, মালা বদল, অগ্নিসাক্ষী, সপ্তপদী, কঙ্কনাঞ্জলি, বধূবরণ, কালরাত্রি, বৌভাত, ফুলশয্যা ইত্যাদি সহ আরো বেশ কিছু প্রথা চালু আছে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়েতে।

লেখক এর শেষ মন্তব্য

হিন্দু বিয়ের নিয়ম কানুন, আচার অনুষ্ঠান সবকিছুই অনেক বেশি এবং তাদেরকে এগুলো মান্য করেই বিবাহ সম্পন্ন করাতে হয়। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই বিয়েতে কিন্তু সত্যিই অনেক মজা হয়। অনেক অনেক নিয়ম কানুন, আচার অনুষ্ঠান থাকার কারণে এই বিয়েটা সবাই অনেক বেশি ইনজয় করে থাকে। হিন্দু বিয়ের এই যে নিয়ম কানুন গুলো সম্পর্কে যদি আপনার কোন ধারণা না থাকে তাহলে আমি মনে করি যে আজকের এই পোস্টটি পড়ার পর এই সম্পর্কে আপনার অনেক বেশি ধারণা হয়ে যাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
AB AKASH
AB AKASH
AB AKASH is a skilled Digital Marketing and Content Writing Expert specializing in driving organic growth through Blog SEO and strategic content creation. With a proven ability to translate complex ideas into compelling, high-ranking web content, AB AKASH helps businesses significantly boost their online visibility and engagement. Currently completing his Honours 4th Year in the Department of English at Rajshahi New Government Degree College.thank you.