শিবরাত্রি ২০২৫ সময়সূচি - শিবরাত্রি কেন রাতে পালন করা হয়

হিন্দু ধর্মের শ্রাস্ত্রে অনুযায়ী মহাশিবরাত্রি একটি বিশেষ তিথি। তাই এটি নতুন বছরে কবে পালিত হচ্ছে সে প্রসঙ্গে আজকের প্রতিবেদন।পুরো প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো কারণ আজ আমরা মহাশিবরাত্রি কেনো এতো বিশেষ, কিভাবে পালন করবো সহ শিবরাত্রি ২০২৫ সময়সূচি জানবো।
শিবরাত্রি ২০২৫ সময়সূচি
প্রথমে আমরা এই প্রতিবেদনে শিবরাত্রি ২০২৫ সময়সূচি সম্পর্কে তুলে ধরবো। এরপরে আমরা শিবরাত্রি নিয়ে বেশকিছু অজানা তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো আশা করি সেসব তথ্য গুলো জানার মাধ্যমে আপনি সঠিকভাবে শিবরাত্রি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট হবেন। তাই চলুন এখন আমরা শিবরাত্রি নিয়ে আজানা তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা জেনে নিই।

পোস্টের সূচিপত্রঃশিবরাত্রি ২০২৫ সময়সূচি - শিবরাত্রি কেন রাতে পালন করা হয়

শিবরাত্রি ২০২৫ সময়সূচি

মহা শিবরাত্রি হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা ভগবান শিবের আরাধনায় উৎসর্গিত। শিবরাত্রি ২০২৫ সময়সূচি বা মহা শিবরাত্রি পালিত হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার। চতুর্দশী তিথি শুরু হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯:৪২ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮:৩১ মিনিটে। শাস্ত্র অনুযায়ী, মহা শিবরাত্রির পূজার সর্বোত্তম সময় হলো নিশীথ কাল, যা মধ্যরাত্রিতে হয়। এই সময়ে ভক্তরা উপবাস পালন করে এবং ভগবান শিবের বিশেষ পূজা-অর্চনা করেন।

শিবরাত্রি কেন রাতে পালন করা হয়

মহা শিবরাত্রি রাতে পালন করা হয় কেন? মহা শিবরাত্রি হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান উৎসব, যা ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালন করা হয়। শাস্ত্র ও পৌরাণিক কাহিনিগুলোর ভিত্তিতে মহা শিবরাত্রি রাতে পালনের কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছেঃ
  • ১.ভগবান শিবের মহামিলন (বিবাহ রাত্রি)
  • অনেক বিশ্বাস অনুসারে, মহা শিবরাত্রির রাতে শিব ও পার্বতীর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।
  • এই কারণে, ভক্তরা সারারাত জেগে উপবাস পালন করে ও শিব-পার্বতীর পূজা করে।
  • ২.সমুদ্র মন্থন এবং হালাহল গ্রহণ
  • পুরাণ অনুসারে, দেবতা ও অসুররা সমুদ্র মন্থন করার সময় হালাহল নামক বিষ উৎপন্ন হয়েছিল।
  • এই বিষ পৃথিবী ধ্বংস করতে পারত, তাই শিব তা পান করেছিলেন এবং নিজের কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন।
  • এই ঘটনাটি মহা শিবরাত্রির রাতে ঘটেছিল, তাই শিবভক্তরা উপবাস করে ও সারারাত শিবের আরাধনা করেন।
  • ৩.নিশীথ কালে শিবের বিশেষ কৃপা
  • শিব পূজার শ্রেষ্ঠ সময় হল নিশীথ কাল (মধ্যরাত্রি), যখন শিবের তপস্যার শক্তি সর্বাধিক বলে মনে করা হয়।
  • রাতে শিবলিঙ্গে জল, দুধ, মধু, ও বেলপাতা অর্পণ করলে বিশেষ আশীর্বাদ লাভ হয়।
  • ৪.শিবরাত্রির উপবাস ও জাগরণের গুরুত্ব
  • শিবরাত্রির রাতে জাগরণ (সারারাত জেগে থাকা) গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আত্মশুদ্ধির প্রতীক।
  • সারারাত শিবের নাম কীর্তন করলে পূণ্য অর্জন হয় এবং পাপ থেকে মুক্তি মেলে।
  • ৫.কর্মফল এবং মোক্ষ লাভের উপায়
  • শিবরাত্রির রাতে উপবাস ও পূজা করলে কর্মফলের বোঝা হালকা হয় এবং মোক্ষ লাভের পথ সুগম হয়।
  • বিশ্বাস করা হয়, যারা এই রাতে শিবের আরাধনা করে, তারা পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্ত হতে পারেন।

মহা শিবরাত্রি বিশেষত্ব ও তাৎপর্য

মহা শিবরাত্রি হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা ভগবান শিবের পূজার জন্য নিবেদিত। এটি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। মহা শিবরাত্রি রাত জেগে উপবাস, শিবলিঙ্গে জল ও বেলপাতা নিবেদন, এবং শিব মন্ত্র জপের মাধ্যমে পালন করা হয়।
মহা শিবরাত্রির বিশেষত্ব গুলো জান
  • ১.শিব-পার্বতীর বিবাহের রাতঃ
  • বিশ্বাস করা হয়, মহা শিবরাত্রির রাতে ভগবান শিব ও দেবী পার্বতীর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।
  • তাই এই রাতে শিব-পার্বতীর পূজা করলে দাম্পত্য জীবন সুখী হয় এবং বিবাহযোগ্য নারীদের জন্য এটি শুভ বলে মনে করা হয়।
  • ২.সমুদ্র মন্থন ও হালাহল গ্রহণঃ
  • পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, দেবতা ও অসুররা সমুদ্র মন্থন করার সময় এক ভয়ংকর বিষ (হালাহল) উৎপন্ন হয়েছিল।
  • বিশ্ব রক্ষার জন্য শিব এই বিষ পান করেন এবং নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন, যার ফলে তিনি নীলকণ্ঠ মহাদেব নামে পরিচিত হন।
  • এই ঘটনা শিবরাত্রির রাতে ঘটেছিল, তাই শিবভক্তরা সারারাত জাগরণ করেন।
  • ৩.মোক্ষ ও পাপমোচনের দিনঃ
  • মহা শিবরাত্রিতে শিবের আরাধনা করলে পাপমোচন হয় এবং ভক্তরা মুক্তিলাভের আশীর্বাদ পান।
  • বিশ্বাস করা হয়, এই রাতে শিব নাম জপ করলে পুনর্জন্মের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ৪.নিশীথ কালে শিবের কৃপা লাভের সময়ঃ
  • শিব পূজার সবচেয়ে শুভ সময় নিশীথ কাল বা মধ্যরাত্রি, যখন শিবের বিশেষ শক্তির প্রকাশ ঘটে।
  • শাস্ত্র মতে, এই সময়ে শিবলিঙ্গে জল, দুধ, দই, মধু ও বেলপাতা নিবেদন করলে বিশেষ ফল লাভ হয়।

মহা শিবরাত্রির ব্রত ও পূজা বিধি

  • সকাল থেকে উপবাস রাখা হয় এবং সারাদিন শুধুমাত্র ফল ও জল গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • শিব মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, দুধ, মধু, ঘি ও বেলপাতা অর্পণ করা হয়।
  • "ওম নমঃ শিবায়" মন্ত্র জপ করা হয় এবং শিবের মহিমা নিয়ে কীর্তন করা হয়।
  • সারারাত জাগরণ (জাগরণ) পালন করা হয়, যা শিবভক্তদের জন্য বিশেষ পূণ্যের কাজ।
  • পরের দিন সকালে ব্রত সমাপ্ত করা হয় এবং প্রসাদ গ্রহণ করা হয়।

শিবরাত্রিতে কি কি খাওয়া যাবে না

মহা শিবরাত্রি হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র উপবাস ও পূজার দিন। এই দিনে বিশেষ ব্রত ও উপবাস পালন করা হয়, তাই কিছু নির্দিষ্ট খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। নিচে শিবরাত্রির উপবাসে নিষিদ্ধ খাবারগুলোর তালিকা দেওয়া হলোঃ
  • ১.তামসিক (নিষিদ্ধ) খাবার
  • মাংস, মাছ ও ডিম যেকোনো প্রাণিজ খাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
  • রসুন ও পেঁয়াজ এগুলো তামসিক খাদ্য বলে গণ্য হয় এবং শিব পূজার জন্য অনুপযুক্ত।
  • অ্যালকোহল ও ধূমপান মহা শিবরাত্রির দিন এসব গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
  • ২.দানা জাতীয় খাদ্য (Grains)
  • ভাত, রুটি, আটা ও ময়দার খাবার সাধারণত যেকোনো শস্যজাত খাদ্য উপবাসে খাওয়া বারণ।
  • ডাল ও বীজজাতীয় খাবার এগুলোও উপবাসে নিষিদ্ধ।
  • ৩.লবণযুক্ত খাবার
  • সাধারণ লবণ (টেবিল সল্ট) শিবরাত্রির উপবাসে সাধারণ লবণ খাওয়া বারণ, তবে সেন্ধা লবণ (Sendha Namak) খাওয়া যায়।
  • প্যাকেটজাত চিপস ও ফাস্ট ফুড এগুলোতে সাধারণ লবণ ব্যবহৃত হয়, তাই পরিহার করা উচিত।
  • ৪.মশলাযুক্ত ও তেলে ভাজা খাবার
  • অতিরিক্ত ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার পবিত্র ব্রত চলাকালীন বেশি মশলা ও ঝাল খাওয়া উচিত নয়।
  • ভাজা খাবার (পকোড়া, চপ, সিঙ্গারা ইত্যাদি) এগুলো তেল ও ময়দা দিয়ে তৈরি হওয়ায় নিষিদ্ধ।
  • ৫.চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার
  • সাধারণ চিনি কিছু লোকজন শিবরাত্রিতে চিনি এড়িয়ে চলে, তবে গুড় বা মধু গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • প্যাকেটজাত মিষ্টি কৃত্রিম চিনি ও সংরক্ষণকারী উপাদান থাকায় এগুলো এড়ানো ভালো।

শিবরাত্রিতে কী খাওয়া যাবে

যদি আপনি পূর্ণ উপবাস (Nirjala Vrat) পালন না করেন, তবে কিছু নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমনঃ
  • ফলঃ কলা, আপেল, আঙুর, পেয়ারা ইত্যাদি।
  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ পনির, দই, খেজুর বা মধু মিশ্রিত দুধ।
  • সাবুদানা খাবারঃ সাবুদানা খিচুড়ি বা পায়েস।
  • সেন্ধা লবণ দিয়ে তৈরি খাবারঃ আলু বা কাঁচকলা সিদ্ধ করে সামান্য লবণ দিয়ে খাওয়া যায়।
  • শুদ্ধ জল ও নারকেল পানিঃ হাইড্রেটেড থাকার জন্য উপকারী।

উপসংহার

মহা শিবরাত্রি শক্তি, ধৈর্য ও আত্মশুদ্ধির প্রতীক। এই দিনে ভক্তরা শিবের কৃপা লাভ, পাপমোচন ও সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করেন। মহা শিবরাত্রির ব্রত পালনের মাধ্যমে জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
AB AKASH
AB AKASH
AB AKASH is a skilled Digital Marketing and Content Writing Expert specializing in driving organic growth through Blog SEO and strategic content creation. With a proven ability to translate complex ideas into compelling, high-ranking web content, AB AKASH helps businesses significantly boost their online visibility and engagement. Currently completing his Honours 4th Year in the Department of English at Rajshahi New Government Degree College.thank you.