সরস্বতী পূজার সময় তিথী বার ২০২৬

২০২৬ সালের সরস্বতী পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক অত্যন্ত পবিত্র ও আনন্দঘন দিন। বিদ্যা, জ্ঞান, সঙ্গীত ও শিল্পকলার দেবী মা সরস্বতীর আরাধনায় এই উৎসব বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, লেখক ও শিল্পীদের কাছে গভীর তাৎপর্য বহন করে।
সরস্বতী পূজার সময় তিথী বার ২০২৬
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমী হিসেবে সরস্বতী পূজা পালিত হয়। ২০২৬ সালে এই শুভ তিথি পড়েছে ২৩ জানুয়ারি, শুক্রবার। এই দিনটিতেই ঘরে ঘরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মণ্ডপে মা সরস্বতীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

সরস্বতী পূজার বাংলা এবং ইংলিশ তারিখ

পঞ্চমী তিথি শুরু হবে ২৩ জানুয়ারি ভোর আনুমানিক ২টা ২৮ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি রাত প্রায় ১টা ৪৬ মিনিটে। সেই কারণে ২৩ জানুয়ারি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়টিকে পূজার জন্য সবচেয়ে শুভ বলে ধরা হয়। এই সময়েই সাধারণত প্রতিমা স্থাপন, পুষ্পাঞ্জলি ও আরতি সম্পন্ন করা হয়। বসন্ত পঞ্চমীর সঙ্গে বসন্ত ঋতুর আগমনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তাই এই দিনে প্রকৃতিতেও এক নতুন উজ্জ্বলতা দেখা যায়।

পঞ্জিকা অনুযায়ী সরস্বতী পূজার সময়

সরস্বতী পূজার তিথি ও সময় নিয়ে প্রতি বছর অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি দেখা যায়, কারণ ইংরেজি ক্যালেন্ডার ও হিন্দু পঞ্জিকার গণনা এক নয়। পঞ্জিকা অনুযায়ী সরস্বতী পূজা পালিত হয় মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে, যা বসন্ত পঞ্চমী নামে পরিচিত। ২০২৬ সালে এই পঞ্চমী তিথি শুরু হবে ২৩ জানুয়ারি ভোর ২টা ২৮ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি ভোর ১টা ৪৬ মিনিটে। যদিও তিথি ভোররাতেই শুরু হচ্ছে, শাস্ত্রসম্মত নিয়ম অনুযায়ী যে দিনে সূর্যোদয়ের সময় পঞ্চমী তিথি থাকে, সেই দিনেই পূজা করা উচিত। 

এই কারণেই ২০২৬ সালে সরস্বতী পূজা পালিত হবে ২৩ জানুয়ারি, শুক্রবার।পঞ্জিকার মতে সরস্বতী পূজার জন্য সবচেয়ে শুভ সময় হলো সূর্যোদয়ের পর থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত সময়। ২০২৬ সালে সেই শুভ পূজা মুহূর্ত পড়ছে সকাল আনুমানিক ৭টা ১৫ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যেই প্রতিমা পূজা, অঞ্জলি ও আরতি সম্পন্ন করা সবচেয়ে উত্তম বলে ধরা হয়। পঞ্জিকার এই সময় গণনা অনুসরণ করলে শাস্ত্রসম্মত বিধি বজায় থাকে এবং পূজার পূর্ণ ফল লাভ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই তিথি ও সময় নিয়ে ধন্দে না পড়ে, নির্ভরযোগ্য পঞ্জিকার নির্দেশ মেনেই ২৩ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে নির্ধারিত শুভ সময়ে সরস্বতী পূজা পালন করাই সবচেয়ে সঠিক ও প্রচলিত নিয়ম।

সরস্বতী পূজার মূল ভাবনা হলো জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাধনা। শিক্ষার্থীরা এই দিনে নতুন বই, খাতা ও কলম দেবীর সামনে রেখে প্রার্থনা করে যাতে তাদের শিক্ষা জীবনে সাফল্য আসে এবং বুদ্ধি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। অনেক পরিবারে ছোট শিশুদের হাতেখড়ি বা অক্ষরারম্ভের আয়োজন করা হয়, যা শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপ হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞরাও তাদের বাদ্যযন্ত্র ও শিল্পকর্ম দেবীর চরণে অর্পণ করে আশীর্বাদ কামনা করেন।

 সরস্বতীর প্রণাম মন্ত্রঃ

“সরস্বতী নমস্তুভ্যং বরদে কামরূপিণী
বিদ্যারম্ভং করিষ্যামি সিদ্ধির্ভবতু মে সদা।”
বাংলা অর্থঃ হে মা সরস্বতী, আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম। আপনি বরদানকারিণী এবং ইচ্ছাপূরণকারিণী। আমি বিদ্যার আরম্ভ করতে যাচ্ছি, তাই আপনার কাছে প্রার্থনা আমার এই শিক্ষাজীবনে সর্বদা সাফল্য দান করুন। এই প্রণাম মন্ত্রটি সাধারণত সরস্বতী পূজার সময়, পড়াশোনা শুরু করার আগে কিংবা হাতেখড়ির সময় পাঠ করা হয়। এই মন্ত্রের মাধ্যমে দেবীর কাছে জ্ঞান, বুদ্ধি, স্মরণশক্তি ও সঠিক পথে চলার আশীর্বাদ কামনা করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, নিয়মিত শ্রদ্ধাভরে এই মন্ত্র পাঠ করলে শিক্ষাজীবনে বাধা দূর হয় এবং মন একাগ্র থাকে।

 সরস্বতী পূজার অঞ্জলি মন্ত্রঃ

“ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোস্তুকে।”

বাংলা অর্থঃ হে মা সরস্বতী, আপনি মহাভাগ্যবতী ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। আপনার চোখ পদ্মফুলের মতো সুন্দর, আপনি বিশ্বরূপিণী ও বিশাল দৃষ্টিসম্পন্না। হে জননী, আমাকে বিদ্যা দান করুন এই প্রার্থনাসহ আপনাকে প্রণাম জানাই। এই উৎসবে হলুদ রঙের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বসন্তের প্রতীক হিসেবে অনেকেই হলুদ বা বাসন্তী রঙের পোশাক পরেন এবং ভোগ হিসেবে খিচুড়ি, লাড্ডু, পায়েস ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়। স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃত্তি, গান ও নৃত্যের আয়োজন দেখা যায়, যা উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

সরস্বতী পূজা পালনের সঠিক নিয়ম 

সরস্বতী পূজার দিন ভোরে উঠে প্রথমেই শরীর ও মন শুদ্ধ করা উচিত। স্নান করে পরিষ্কার, শালীন ও সম্ভব হলে হলুদ বা সাদা রঙের পোশাক পরা শ্রেয়, কারণ এই রং বসন্ত ও জ্ঞানের প্রতীক। এরপর বাড়ির বা পূজাস্থলের একটি পরিষ্কার ও শান্ত জায়গায় মা সরস্বতীর প্রতিমা বা ছবি স্থাপন করতে হয়। দেবীর সামনে একটি পরিষ্কার কাপড় বিছিয়ে তার ওপর প্রতিমা বসানো উচিত এবং পাশে বই, খাতা, কলম, বাদ্যযন্ত্র বা শিক্ষাসংক্রান্ত জিনিস রাখা হয়, কারণ এগুলো জ্ঞানের প্রতীক পূজার আগে প্রদীপ জ্বালিয়ে, ধূপ ও ধুনো দিয়ে পরিবেশ শুদ্ধ করা হয়। এরপর ফুল, বেলপাতা (যদি থাকে), ফল, মিষ্টি ও ভোগ নিবেদন করা হয়। সরস্বতী পূজায় সাধারণত নিরামিষ ভোগই দেওয়া হয়, যেমন খিচুড়ি, পায়েস ইত্যাদি।

দেবীর পূজা শুরু করার আগে প্রণাম মন্ত্র পাঠ করা হয়, তারপর ধ্যান মন্ত্র ও মূল পূজা সম্পন্ন করা হয়। পূজার সময় মনকে শান্ত রেখে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে মন্ত্র পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অঞ্জলি দেওয়ার সময় হাতে ফুল নিয়ে দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়। সাধারণত তিনবার অঞ্জলি দেওয়া হয় এবং প্রতিবার অঞ্জলি মন্ত্র পাঠ করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা এই সময় বিশেষভাবে জ্ঞান, স্মরণশক্তি ও একাগ্রতার জন্য প্রার্থনা করে। অনেক জায়গায় ছোট শিশুদের হাতেখড়ি বা অক্ষরারম্ভ এই দিনেই করা হয়, যা শিক্ষাজীবনের শুভ সূচনা হিসেবে ধরা হয়। 

সরস্বতী পূজার দিনে বিশ্বাস অনুযায়ী পড়াশোনা বা লেখালেখি না করে বই-খাতা দেবীর সামনে রেখে দেওয়া হয় এবং পূজার পর প্রসাদ গ্রহণ করা হয়। পূজা শেষ হলে দেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রণাম জানানো হয়। পরদিন বা নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় এবং তারপর আবার নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করা হয়।

সরস্বতী পূজা নিয়ে শেষ কথা

সরস্বতী পূজা আমাদের জীবনে কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক। এই পূজার মাধ্যমে আমরা বিদ্যার দেবী মা সরস্বতীর কাছে কেবল ভালো ফল বা সাফল্যই কামনা করি না, বরং সত্য জ্ঞান, শুদ্ধ বুদ্ধি ও সৃজনশীল মননের আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। সরস্বতী পূজা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিক্ষা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা চরিত্র গঠন, নৈতিকতা ও মনুষ্যত্বের বিকাশের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। বসন্ত পঞ্চমীর এই শুভ দিনে ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে পূজা পালনের মধ্য দিয়ে আমরা অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করি। মা সরস্বতীর কৃপায় আমাদের জীবন জ্ঞান, শুদ্ধতা ও সৎচিন্তায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক এই কামনাতেই সরস্বতী পূজার প্রকৃত সার্থকতা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
AB AKASH
AB AKASH
AB AKASH is a skilled Digital Marketing and Content Writing Expert specializing in driving organic growth through Blog SEO and strategic content creation. With a proven ability to translate complex ideas into compelling, high-ranking web content, AB AKASH helps businesses significantly boost their online visibility and engagement. Currently completing his Honours 4th Year in the Department of English at Rajshahi New Government Degree College.thank you.